
শেরপুর প্রতিনিধি:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রায় নেমেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এক দফার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল সেই আমাদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণ অভ্যুত্থান, যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে দিল্লীতে পালিয়েছিল। সেই দিল্লীতে শেখ হাসিনা বসে রয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজারো সন্ত্রাসীকে দিল্লী আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত পুশ ইন করে বাংলাদেশে জনগণকে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই পুশ ইনের বিরোধীতা করেছি। আমরা ভারত সরকারকে স্পষ্টভাবে বলেছি, আমরা সীমান্তে কোন ধরণের হত্যাকান্ড এবং পুশ ইনকে মেনে নিবো না। আমরা এও বলেছি পুশ ইন করতে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পুশ ইন করুন। শেখ হাসিনাকে পুশ ইন করুন। আমরা বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো।’ তিনি আজ ২৭ জুলাই রবিবার শেরপুর জেলা নাগরিক পার্টি আয়োজিত পদযাত্রা উপলক্ষে শেরপুর পৌরসভার থানা মোড়ে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন।
এনসিপি জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার লিখন এর সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রা হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যেও আমরা দৃশ্যমান কোনো বিচার দেখিনি। আওয়ামী লীগের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গিয়েছে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে। আমরা গোপালগঞ্জে দেখেছি কিভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছোবল মেরে উঠতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি, গোপালগঞ্জ কেন বাংলাদেশের কোন জায়গাতেই আমরা আর মুজিববাদকে দাঁড়াতে দিবো না। যারা এখনো পুলিশে, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে কাজ করছেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এবং আওয়ামী লীগের এমপিদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানি এই শেরপুর জীববৈচিত্রময় এলাকা। এই শেরপুরের জনগণ প্রতিবছর পাহাড়ি ঢল এবং বন্যায় দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত হয়। শেরপুরের বন উজাড় করার কারণে হাতি লোকালয়ে চলে আসে। প্রতিবছর পদদলিত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। শেরপুরে হাসপাতাল থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নাই। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান নাই। শেখ হাসিনার শাসনামলে শেরপুর জেলা কোনো ধরণের উন্নয়ন পায় নাই। উন্নয়ন পেয়েছে শুধুমাত্র সেই আওয়ামী দোসরেরা। যারা দেশের টাকা লুট করে এখন বিদেশে পলাতক অবস্থায় রয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আপনাদের শেরপুরের সন্তানেরা শহীদ হয়েছেন, সারাদেশের মানুষেরা রাজপথে নেমে এসেছিল সেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, আপনাদের এই শেরপুরের উন্নয়নের জন্য, সারাদেশের মানুষের ভগ্যের উন্নয়নের জন্য। তিনি বলেন, আর জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই প্রকৃত উন্নয়নের, সেই সুষম উন্নয়নের রাজনীতি করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী সংস্কারের আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে যে কোন মূল্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে। সেই সাথে জুলাই পত্রও ঘোষণা করতে হবে। ঐক্যমত্য কমিশন বলেছে, দুই তিনদিনের মধ্যে জুলাই সনদের কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। আমরাও চাই যদি ৫ আগস্টের মধ্যে এটি ঘোষণা করা না হয় তবে আমরা তিন আগস্ট ঢাকায় আসছি। ঢাকায় আমরা কিন্তু জুলাই সনদ পত্র আদায় না করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আমরা ছাড়বো না। জুলাই সনদে আমরা বলেছি, যে কারণে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি হলো সেই রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাখা যাবে না। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ক্ষমতা রাখা যাবে না। এই জন্যই আমরা বলেছি উচ্চ কক্ষ লাগবে। এই উচ্চ কক্ষ অবশ্যই পি আর পদ্ধতিতেই হতে হবে।
তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা এই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি। যদি মৌলিক সংস্কার না হয়, রাষ্ট্রের কোনো গুণগত পরিবর্তন যদি এই জুলাই সনদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা না যায় তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি এই জুলাই সনদে সমর্থন দিবে না। আমরা আরও বলতে চাই জুলাই সনদের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণা পত্র ছাত্র জনতার দাবি ছিল। কিন্তু সরকার বারবার এই দাবিকে উপেক্ষা করেছে। কিন্তু এবার ৩ আগস্ট এই দাবীকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ আমরা দিবো না। জুলাই ঘোষণা পত্র অবশ্যই জারি করতে হবে এবং নতুন সংবিধানে তা যুক্ত করতে হবে।
পথসভা শুরুর আগে বিকাল ৫টা চল্লিশ মিনিটে কলেজ মোড় এলাকার শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে এসে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পথসভায় যোগ দেন। সন্ধ্যার পর নেতৃবৃন্দ জামালপুরে পদযাত্রায় অংশ নিতে শেরপুর ত্যাগ করেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শহরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।